আজকে আমরা অবজেক্ট এর মাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা আর্কিটেকচার ড্রাফট উইথ ক্যাড – ২ এর দ্বিতীয় পত্র অংশের অন্তর্গত।

Table of Contents
অবজেক্ট এর মাত্রা
বস্তু মাত্রই তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা কোন না কোন দিক থাকবে। কোনো বস্তু আছে যার দৈর্ঘ্য আছে আর কিছুই নেই আবার কোনো কোনো বস্তু আছে যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে আর কিছু নেই। কিছু বস্তুর যেমন শুধু অবস্থান আছে আর কোন দিকেই কিছু নেই তেমনি কিছু বস্তুর আবার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সবই আছে। আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে রয়েছে এসব বিভিন্ন রকমের বস্তু। এই যে বস্তুর বিভিন্ন দিক রয়েছে যা মাপা যায় বা পরিমাপযোগ্য তাকেই বস্তুর মাত্রা (Dimension) বলা হয় ।
অবজেক্ট এর বিভিন্ন মাত্রার নাম ও সংজ্ঞা
আমাদের চারপাশে অসংখ্য বস্তু রয়েছে। প্রতিটি বস্তুরই এক বা একাধিক দিক রয়েছে যা মাপা যায় বা পরিমাপ যোগ্য। কিছু বস্তু আছে যার কেবল একটি দিক মাপা যায়, আবার এমনও বস্তু রয়েছে যার দুই বা তিনটি দিক পরিমাপ করা যায়। এরূপ পরিমাপ যোগ্যতার ভিত্তিতে বস্তুকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। বিভিন্ন বস্তু বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে যেমন—
- মাত্রাহীন বস্তু (Dimension Less Object)
- এক-মাত্রিক বস্তু (One or Single Dimensional Object)
- দ্বি-মাত্রিক বস্তু (Two Dimensional or 2D Object)
- ত্রি-মাত্রিক বস্তু (Three Dimensional or 3D Object)

মাত্রাহীন বস্তু:
যার তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা কোন দিক নেই শুধু অবস্থান আছে তাকে মাত্রাহীন বস্তু বলে, যেমন বিন্দু বা ডট (Dot)। কোনো একটি মার্বেলও একটি বিন্দু, আবার বৃহৎ পরিসরে মহাবিশ্বের মধ্যে পৃথিবীও একটি বড় বিন্দু মাত্ৰ ।
এক-মাত্রিক বস্তু:
যার শুধু দৈর্ঘ্য বা একটি দিকের মাপ আছে তাকে একমাত্রিক বস্তু বলে, যেমন— রেখা বা লাইন (Line)। আমাদের চারপাশে অসংখ্য রেখাকৃতির বস্তু রয়েছে যেমন, যে কোনো ধরনের খুঁটি বা ল্যাম্পপোস্ট, চেয়ার বা টেবিলের পায়া, গ্রিল, রেলিং, রাস্তা ইত্যাদি। আবার মানুষ স্রষ্টার এক অনবদ্য রৈখিক সৃষ্টি মাত্র ।
দ্বি মাত্রিক বস্তু:
যে বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে কিন্তু উচ্চতা নেই অর্থাৎ দুটি দিকের মাপ পাওয়া যায় তাকে দ্বি মাত্রিক বস্তু বলে, যেমন— তল বা Plane
আমাদের চারপাশে অসংখ্য দ্বি-মাত্রিক বস্তু রয়েছে যেমন, যে কোনো ধরনের পৃষ্ঠ, চেয়ার বা টেবিলের উপরিতল, দরজা, জানালা, দেয়াল ইত্যাদি বর্গাকার বা আয়তকার দ্বি-মাত্রিক বস্তু বিশেষ। তেমনি গোলাকার টেবিলের উপরিতল গোলাকার দ্বি-মাত্রিক বস্তু আর পিরামিডের পার্শ্ব ত্রিভুজাকার দ্বি-মাত্রিক বস্তুর অনন্য উদাহরণ। আবার একখণ্ড জমি অসম আকৃতির দ্বি-মাত্রিক বস্তু মাত্র ।
ত্রি-মাত্রিক বস্তু:
যে বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে অর্থাৎ তিনটি দিকের মাপ পাওয়া যায় তাকে ত্রি-মাত্রিক । বস্তু বলে, যেমন- ঘনক বা Cube আমাদের চারপাশে আমরা যা কিছু দেখতে পাই সবই ত্রি-মাত্রিক বস্তু। বাক্স, আলমিরা, যে কোনো কক্ষ বর্গাকার বা আয়তকার ত্রি-মাত্রিক বস্তু আবার ডোম ছাদ, বল, ড্রাম বা সিলিন্ডার গোলাকার ও পিরামিড ত্রিভুজাকার ত্রি-মাত্রিক বস্তু বিশেষ ।
দ্বি-মাত্রিক বস্তু ও ত্রি-মাত্রিক বস্তুর মধ্যে পার্থক্য
দ্বি-মাত্রিক বস্তু | ত্রি-মাত্রিক বস্তু |
| ১. যে বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে কিন্তু উচ্চতা নেই অর্থাৎ | দুটি দিকের মাপ পাওয়া যায় তাকে দ্বি-মাত্রিক বস্তু বলে। | ১. যে বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে অর্থাৎ তিনটি দিকের মাপ পাওয়া যায় তাকে ত্রি-মাত্রিক বস্তু বলে। |
| ২. দুই মাত্রা বিশিষ্ট । | ২. তিন মাত্রা বিশিষ্ট । |
| ৩. ড্রয়িং-এর ক্ষেত্রে অর্থোগ্রাফিক ভিউ বা প্ল্যান, এলিভেশন, সেকশন ইত্যাদি দ্বি-মাত্রিক ড্রয়িং। | ৩. ড্রয়িং-এর ক্ষেত্রে আইসোমেট্রিক ভিউ, পার্সপেক্টিভ ভিউ, অবলিক ভিউ ইত্যাদি ত্রি-মাত্রিক ড্রয়িং। |
| ৪. কিছু এক-মাত্রিক বস্তুর সমন্বয়ে দ্বি-মাত্রিক বস্তু তৈরি হয়। | ৪. সকল মাত্রার সমন্বয়ে বস্তুর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ বা কিছু দ্বি-মাত্রিক বস্তুর সমন্বয়ে ত্রি-মাত্রিক বস্তু তৈরি হয়। |
| ৫. সকল ক্ষেত্রে বস্তুকে পরিপূর্ণভাবে বোঝা যায় না বাহ্যিক একটা ধারণা পাওয়া যায়। | ৫. সকল ক্ষেত্রে বস্তুর বাস্তব রূপ বোঝা যায় ৷ |
| ৬. বোঝার জন্য বিশেষ কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন। | ৬. বোঝার জন্য বিশেষ কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। |
দ্বি-মাত্রিক বস্তুর ব্যবহার
বিভিন্ন দ্বি-মাত্রিক বস্তু আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে যেমন—
- দেয়ালের পৃষ্ঠদেশ যা কক্ষ বা বিল্ডিং তৈরি করে,
- টেবিল টপ বা উপরিভাগ টেবিল তৈরিতে,
- ছাদ আচ্ছাদনে, ফ্লোর ভিন্ন ভিন্ন তলা তৈরিতে,
- রাস্তা চলাচলের জন্য,
- ব্রিজ-এর টপ পারাপারের জন্য,
- ভূমি যে কোনো কাজে এভাবে প্রতিটি দ্বি-মাত্রিক বহু বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে, এছাড়া
- প্ল্যান একটি দ্বি-মাত্রিক ড্রয়িং, স্থাপত্যে যা ছাড়া কোন নির্মাণ কাঠামো প্রস্তুত করা সম্ভব নয় ।
- এলিভেশন-একটি দ্বি-মাত্রিক ড্রয়িং, যা বাহ্যিক অবয়ব নির্দেশ করে ।
- সেকশন-একটি দ্বি-মাত্রিক ড্রয়িং, যাতে অভ্যন্তরীণ নির্মাণ উপকরণ দেখা যায় ও ভিতরে কোথায় কি আছে বোঝা যায় ।
এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বি-মাত্রিক ড্রয়িং যা ছাড়া কোন নির্মাণ কাজ করা অসম্ভব। কাজেই দ্বি-মাত্রিক ড্রয়িং-এর ব্যবহার স্থাপত্যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপরিহার্য।

ত্রি-মাত্রিক বস্তুর ব্যবহার
আমাদের চারপাশে একক ভাবে দ্বি-মাত্রিক বস্তুর চেয়ে ত্রি-মাত্রিক বস্তুর সংখ্যাই বেশি। বস্তুত সবই ত্রি-মাত্রিক বস্তু যা বিভিন্ন দ্বি-মাত্রিক বস্তুর সমন্বয়ে তৈরি। আমরা আশেপাশে যা কিছু দেখি প্রায় সবই ত্রি-মাত্রিক বস্তু। যেমন মানুষ, গাছপালা, জীবজন্তু, যানবাহন ইত্যাদি সবই ত্রি-মাত্রিক বস্তু বিশেষ। বিভিন্ন ত্রি-মাত্রিক বস্তু আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে যেমন—
- যে কোনো কক্ষ বা যে কোনো বিল্ডিং,
- কক্ষের ভেতরের প্রতিটি আসবাব,
- দৈনন্দিন জীবনের প্রাত্যহিক ব্যবহার্য প্রতিটি বস্তু,
- সামগ্রিক রাস্তা ও এর উপর চলমান যানবাহন চলাচলের জন্য,
- সম্পূর্ণ ব্রিজ পারাপারের জন্য,
- ভূমির উপর নির্মিত যে কোনো কাঠামো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে, এছাড়া ড্রয়িং-এর ক্ষেত্রে-
- আইসোমেট্রিক ভিউ: একটি ত্রি-মাত্রিক ড্রয়িং, স্থাপত্যে যা দিয়ে খুব সহজেই একটি বস্তুকে বোঝানো যায়, ছোটো যে কোনো বস্তুকে বোঝানোর জন্য বেশি উপযোগী ।
- অবলিক ভিউ: একটি ত্রি-মাত্রিক ড্রয়িং, যা সম্মুখ দৃশ্যকে বেশি প্রধান্য দিয়ে অঙ্কন করা হয়, আসবাব পত্র এ জাতীয় বস্তুর ড্রয়িং-এ বেশি উপযোগী ।
- পার্সপেক্টিভ ভিউ: একটি ত্রি-মাত্রিক ড্রয়িং, যা বস্তুটি বাস্তবে যেমন দেখা যায় হুবহু তেমন করেই বোঝানো সম্ভব ।
প্রশ্নমালা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. বস্তুর মাত্রা কী?
২. বস্তুর মাত্রা কত প্রকার ও কি কি?
৩. চারটি এক-মাত্রিক বস্তুর নাম লেখ।
৪. চারটি দ্বি-মাত্রিক বস্তুর নাম লেখ।
৫. চারটি ত্রি-মাত্রিক বস্তুর নাম লেখ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মাত্রাহীন বস্তু বলিতে কি বোঝায়, উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
২. এক-মাত্রিক বস্তু বলতে কি বাঝায়, উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
৩. উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রকার মাত্রার বস্তুর নাম লেখ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বিভিন্ন প্রকার মাত্রার বস্তুর উদাহরণসহ সংজ্ঞা লেখ ।
২. দ্বি-মাত্রিক ও ত্রি-মাত্রিক বস্তুর মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর।
৩. দ্বি-মাত্রিক বস্তুর ব্যবহার বর্ণনা কর।
৪. ত্রি-মাত্রিক বস্তুর ব্যবহার বর্ণনা কর।

