পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” এর “জরিপের ধারণা” বিভাগভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। জরিপ বলতে ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুর প্রকৃত অবস্থান, আপেক্ষিক উচ্চতা, দিক, রৈখিক ও কৌনিক দূরত্ব ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করে একটি নির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে সমতল কাগজে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।
মানবসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে জরিপ কার্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভূমি ব্যবহার, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থাপত্য নকশা, কৃষি পরিকল্পনা, পরিবেশ সংরক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রে জরিপ একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনের ফলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ ও কার্যকর হয়।
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আকাশ চিত্র (Aerial Photography) ও উপগ্রহ চিত্র (Satellite Imagery) গবেষণা ও বিশ্লেষণের কাজে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে অনেক ক্ষেত্রেই ভূমি জরিপ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সুতরাং বলা যায়, যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে জরিপ প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির ধরণ পরিবর্তিত হলেও এর প্রয়োজনীয়তা কখনই কমবে না, বরং আরও বহুমুখী ও বিস্তৃত হবে।
Table of Contents
জরিপ কাজের শ্রেণিবিভাগ:
জরিপ কাজকে মূলত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:
ক) সরজমিন কাজ (Field Work):
ভূমি বা প্রাকৃতিক পরিবেশে সরাসরি পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ করা কাজকে সরজমিন কাজ বলা হয়। এর মধ্যে অবস্থান চিহ্নিতকরণ, উচ্চতা নির্ণয়, দূরত্ব মাপা, দিক নির্ধারণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
খ) দাপ্তরিক কাজ (Office Work):
সরজমিনে সংগৃহীত তথ্যসমূহকে পরিকল্পিতভাবে সমতল কাগজে বা ডিজিটাল ম্যাপে উপস্থাপন করা, ড্রয়িং তৈরি করা, হিসাব-নিকাশ করা এবং প্রতিবেদন প্রস্তুত করা দাপ্তরিক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
গ) যন্ত্রপাতি সমন্বয়ন ও তত্ত্বাবধান (Instrument Coordination and Supervision):
জরিপ কার্যক্রমে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং কর্মীদের কার্যক্রমের সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা তত্ত্বাবধায়ক কাজ।
কাজের প্রকৃতি অনুসারে জরিপের প্রকারভেদ:
১. ভূমি জরিপ (Land Survey):
ভূমি ও স্থাপনা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য করা জরিপ।
২. সামুদ্রিক জরিপ (Marine Survey):
সাগর, নদী বা জলাশয়ের গভীরতা, শীর্ষস্থান ও উপকূলরেখা পরিমাপের জন্য করা জরিপ।
৩. জ্যোতিষীয় জরিপ (Astronomical Survey):
অবস্থান নির্ধারণ ও দিকনির্দেশনার জন্য জ্যোতির্বিদ্যা ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ দ্বারা পরিচালিত জরিপ।
ভূমি জরিপের প্রকারভেদ:
ভূমি জরিপকে চার ভাগে ভাগ করা হয়:
১. ভূ-সংস্থানিক জরিপ (Topographical Survey):
ভূমির উপরিভাগ, প্রাকৃতিক ও মানব-নির্মিত অবকাঠামোর অবস্থান ও রূপ চিহ্নিত করার জন্য।
২. কিস্তোয়ার জরিপ (Cadastral Survey):
জমির মালিকানা, সীমানা ও ল্যান্ড রেকর্ডের জন্য করা জরিপ।
৩. নগর জরিপ (City Survey / Urban Survey):
নগর বা শহরের রাস্তা, ভবন, সড়ক ও অবকাঠামোর বিশদ পরিকল্পনার জন্য।
৪. প্রকৌশল জরিপ (Engineering Survey):
সেতু, বাঁধ, রেলপথ, সড়ক, পাইপলাইন প্রভৃতি প্রকৌশল কাঠামোর জন্য।
বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে জরিপের প্রকারভেদ:
১. ভূমণ্ডলীয় জরিপ (Geodetic Survey):
পৃথিবীর আকৃতি, পৃষ্ঠ ও স্থিতি নির্ধারণে উচ্চ-সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে করা জরিপ।
২. সমতলিক জরিপ (Plane Survey):
ভূমি তুলনামূলকভাবে সমতল বা ছোট এলাকার জন্য নির্ভুলতা অপেক্ষাকৃত কম, সাধারণ জরিপ পদ্ধতি।
ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর ভিত্তি করে জরিপ ছয় প্রকারঃ-
জরিপ কার্যক্রমে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অনুযায়ী জরিপকে ছয়টি মূল প্রকারে ভাগ করা যায়। প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব পদ্ধতি, ব্যবহার ক্ষেত্র ও লক্ষ্য থাকে।
ক) শিকল জরিপ (Chain Survey):
শিকল বা চেইন ব্যবহার করে দূরত্ব পরিমাপের মাধ্যমে জমি বা ছোট এলাকা পরিমাপ করা হয়। এটি সহজ এবং দ্রুততম পদ্ধতি, বিশেষ করে সমতল এবং ছোট অঞ্চলের জন্য ব্যবহারযোগ্য।
খ) কম্পাস জরিপ (Compass Survey):
কম্পাস ব্যবহার করে বিভিন্ন দিক এবং লাইনরেখা নির্ধারণ করা হয়। এটি সাধারণ দিক নির্দেশ ও মৌলিক মানচিত্র অঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
গ) প্লেন টেবিল জরিপ (Plane Table Survey):
প্লেন টেবিল ও ট্রাইপড ব্যবহার করে সরাসরি সমতল কাগজে পরিমাপের ফলাফল অঙ্কন করা হয়। এটি দ্রুত এবং সরজমিনে ড্রয়িং তৈরি করতে সহায়ক।
ঘ) থিওডোলাইট জরিপ (Theodolite Survey):
উচ্চ-সুনির্দিষ্ট কোণ পরিমাপের জন্য থিওডোলাইট ব্যবহার করা হয়। এটি ভূমি, শহর ও প্রকৌশল কাঠামোর জন্য খুবই কার্যকর।
ঙ) ট্যাকোমিটার জরিপ (Tachometric / Tacheometry Survey):
ট্যাকোমিটার ব্যবহার করে দ্রুত দূরত্ব, উচ্চতা ও কোণ পরিমাপ করা হয়। এটি প্রধানত দ্রুতমানচিত্র তৈরি ও প্রকৌশল কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
চ) বিমান জরিপ (Aerial Survey):
উচ্চতায় বা আকাশচিত্র গ্রহণের মাধ্যমে ভূমি ও অবকাঠামোর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উপগ্রহ চিত্র বা ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে বিশাল এলাকার জরিপ দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করা সম্ভব।
শিকল জরিপের মূলনীতিঃ-
শিকল জরিপে নির্ভুল ও কার্যকর পরিমাপের জন্য কয়েকটি মূল নীতি অনুসরণ করা হয়। এগুলো জরিপের সঠিকতা নিশ্চিত করে।
ক) ত্রিভুজায়ন (Triangulation):
শিকল ব্যবহার করে এলাকাটি ছোট ছোট ত্রিভুজে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ত্রিভুজের দৈর্ঘ্য ও কোণ পরিমাপ করে পুরো এলাকা নির্ধারণ করা হয়।
খ) জরিপ সম্পূর্ণ থেকে অংশের দিকে (Whole to Part Principle):
পূর্ণ এলাকা নির্ধারণের পর ছোট অংশগুলো নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ আগে বড় ছবি দেখা হয়, তারপর বিস্তারিত কাজ করা হয়।
গ) যাচাই রেখা অঙ্কন (Check Lines / Tie Lines):
ত্রিভুজায়ন বা পরিমাপের ভুল কমানোর জন্য যাচাই রেখা অঙ্কন করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে পরিমাপ সঠিক ও নির্ভুল।
প্লেনটেবিল জরিপ চার প্রকারঃ-
প্লেনটেবিল জরিপ সরাসরি সমতল কাগজে অঙ্কন করা হয়। এ পদ্ধতিতে চারটি মূল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ঃ
ক) ট্রাভার্সিং (Traversing):
নির্দিষ্ট পথে কয়েকটি বিন্দুর মাধ্যমে মানচিত্র অঙ্কন করা হয়।
খ) রেডিয়েশন (Radiation):
একটি কেন্দ্রীয় বিন্দু থেকে বিভিন্ন দিকে রেখা অঙ্কন করে অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
গ) ইন্টারসেকশন (Intersection):
বহু স্থানে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে রেখার ছেদ বিন্দু দ্বারা অঙ্কন করা হয়।
ঘ) রিসেকশন (Resection):
অজ্ঞাত বিন্দু থেকে পরিচিত স্থাপনার দিকনির্দেশ ব্যবহার করে অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
বেঞ্চমার্ক চার প্রকারঃ
জরিপে উচ্চতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত বেঞ্চমার্ক (Benchmark) চার প্রকারের হতে পারেঃ
ক) জি.টি.এস (G.T.S):
জাতীয় মানসম্পন্ন স্থায়ী বেঞ্চমার্ক, সাধারণত সরকারের স্থাপিত।
খ) স্থায়ী (Permanent):
দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারযোগ্য বেঞ্চমার্ক, যা স্থাপন করা হয় স্থায়ী কাঠামোর সাথে।
গ) অস্থায়ী (Temporary):
স্বল্পকালীন জরিপের জন্য তৈরি বেঞ্চমার্ক।
ঘ) ধার্যকৃত (Arbitrary):
যথাযথ মান নেই এমন বেঞ্চমার্ক, জরিপকর্তার convenience অনুযায়ী ধারা করা হয়।
ঘের(ট্রার্ভাস)দুই প্রকারঃ-
জরিপে ব্যবহৃত ঘের বা ট্রাভার্স প্রধানত দুই প্রকারঃ
ক) বন্ধ ঘের (Closed Traverse):
এই ঘেরটি একটি সম্পূর্ণ বন্ধ চক্রে তৈরি হয়। শুরু এবং শেষ বিন্দু একই হয়, যা যাচাই বা ত্রুটি নির্ণয়ের সুবিধা দেয়।
খ) খোলা ঘের (Open Traverse):
এই ঘেরটি শুরু এবং শেষ বিন্দু ভিন্ন স্থানে থাকে। এটি সাধারণত দীর্ঘ পথ বা সড়ক ও পাইপলাইনের জরিপে ব্যবহৃত হয়।
বাঁক (Curve)
রেখা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বাঁক প্রধানত দুই প্রকারঃ
ক) বৃত্তাকার বাঁক (Circular Curve):
সমান্তরাল বা নির্দিষ্ট বৃত্তাকার পথে বাঁক।
খ) অধিবৃত্তাকার বাঁক (Transition / Spiral Curve):
দুটি বৃত্তাকার অংশের মধ্যে সুশৃঙ্খল পরিবর্তন সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত।
বৃত্তাকার বাঁকের তিন প্রকারঃ
- সরল (Simple): একক ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার বাঁক।
- যৌগিক (Compound): একাধিক বৃত্তাকার অংশ সংযুক্ত করে তৈরি বাঁক।
- বিপরীত (Reverse): বিপরীত দিকের দুটি বৃত্তাকার বাঁকের সংযোগ।
অধিবৃত্তাকার বাঁকের দুই প্রকারঃ
- ক্রান্তি বাঁক (Transition / Spiral Curve):
- সর্পিল (Helical): ধীরে ধীরে বাঁকানো লম্বা রেখা।
- ত্রিমাত্রিক (Three-dimensional): স্থানিক তিন মাত্রার বাঁক।
- লেমনিস্কেট অব বার্নোলি (Bernoulli Lemniscate): বিশেষ অকার্বিক বাঁক।
- উল্লম্ব বাঁক (Vertical Curve):
- উত্তল বাঁক (Crest): উঁচু স্থান থেকে নিচের দিকে ক্রমবর্ধমান বাঁক।
- অবতল বাঁক (Sag): নিচু স্থান থেকে উচ্চতার দিকে ওঠা বাঁক।
থিওডোলাইট দুই প্রকারঃ-
সঠিক কোণ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত থিওডোলাইট দুই প্রকারঃ
ক) ট্রানজিট (Transit):
পান এবং দিক পরিবর্তনের সুবিধা সম্বলিত, প্রায় সব ধরনের কোণ পরিমাপের জন্য।
খ) নন-ট্রানজিট (Non-Transit):
ট্রানজিটের তুলনায় সহজ, কম ফাংশনাল কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট জরিপে ব্যবহৃত।
জরিপে ব্যবহৃত কনসেপ্ট ও পরিমাপের সংজ্ঞা
কন্টুর (Contour):
নির্দিষ্ট উপাত্ততল থেকে সমলম্ব দূরত্বে অবস্থানরত বিভিন্ন বিন্দুকে সংযুক্ত করে যে কাল্পনিক রেখা অঙ্কন করা হয় তাকে কন্টুর বলে। কন্টুর দ্বারা ভূমির উচ্চতা, ঢাল, চূড়ান্ত বিন্দু ইত্যাদি সহজে বোঝা যায়।
কন্টুরিং (Contouring):
জরিপ বিদ্যার সেই প্রক্রিয়াকে কন্টুরিং বলা হয় যার মাধ্যমে কন্টুর মানচিত্র ও নকশা তৈরি করা হয়। এটি ভূ-পৃষ্ঠের প্রকৃত রূপের ব্যাখ্যা দিতে এবং পরিকল্পনামূলক কাজের জন্য অপরিহার্য।
ফ্লাই লেভেল (Fly Level):
কোনো বেঞ্চমার্ক থেকে দূরবর্তী বিন্দুর RL (Reduced Level) নির্ধারণ করার জন্য যে লেভেলিং করা হয় তাকে ফ্লাই লেভেল বলা হয়। এটি প্রধানত আংশিক উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রোফাইল লেভেলিং (Profile Leveling):
ভূ-পৃষ্ঠের প্রকৃত অবস্থান ও ঢাল বোঝার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে RL নির্ণয় করার জন্য যে লেভেলিং করা হয় তাকে প্রোফাইল লেভেলিং বলে। এটি সড়ক, বাঁধ, খাল ইত্যাদি প্রকৌশল প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ফোকাসিং (Focusing):
লক্ষ্যবস্তু স্পষ্টভাবে দেখার জন্য অভিনেত্র লেন্স এবং অভিলক্ষ লেন্সকে সঠিক দূরত্বে স্থাপন করাকে ফোকাসিং বলা হয়।
প্যারালাক্স (Parallax):
অভিলক্ষ কাঁচের মাধ্যমে প্রতিফলিত কোনো বস্তু যদি সঠিকভাবে ডায়াফ্রামের তলে না পড়ে, তখন যে প্রতিফলন ত্রুটি হয় তাকে প্যারালাক্স বলে। এটি সাধারণত দুর্বল ফোকাসিংয়ের কারণে ঘটে।
জরিপে ব্যবহৃত প্রাথমিক দৈর্ঘ্য একক
| একক | দৈর্ঘ্য / ব্যাখ্যা |
|---|---|
| ১ লিংক | ৭.৯২ ইঞ্চি |
| ৮০ গান্টাস শিকল | ১ মাইল |
| ১০ বর্গ গান্টার্স শিকল | ১ একর |
| Engineering শিকল | ১০০ ফুট |
| মিটার শিকল | ২০ মিটার বা ৩০ মিটার |
| গান্টার্স শিকল | ৬৬ ফুট |
| রেঞ্জি রড | দৈর্ঘ্য ২ বা ৩ মিটার, ব্যাস ৩ সেমি |
জরিপে ব্যবহৃত সংক্ষিপ্ত রূপ
H.F.L = Highest Flood Level (সর্বোচ্চ বন্যার উচ্চতা)
M.S.L = Mean Sea Level (গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা)
G.T.S = Great Triangulation Survey (মহত্রিভুজ জরিপ)
B.M = Bench Mark (স্থায়ী মানচিহ্ন)
R.L = Reduced Level (নির্ধারিত উচ্চতা)
E.D.M = Electronic Distance Measurement (ইলেকট্রনিক দূরত্ব পরিমাপ)

দাপ্তরিক কাজ | জরিপের ধারণা | সার্ভেয়িং ১
সরজমিনে প্রাপ্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিপিবদ্ধ তথ্যাদি থেকে নকশা বা মানচিত্র (Plan or Map) তৈরি করা কাজকে দাপ্তরিক কাজ বলা হয়। এটি জরিপের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এর মাধ্যমে ক্ষেত্রফল, আয়তন, স্থানীয় অবকাঠামো এবং অন্যান্য তথ্যের সঠিক নকশা প্রস্তুত করা হয়।
দাপ্তরিক কাজের প্রধান ধাপসমূহ হলো—
১. হিসাবনিকাশকরণ (Computation):
সরজমিনে প্রাপ্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিপিবদ্ধ তথ্যের ভিত্তিতে নকশা বা মানচিত্র অঙ্কনের জন্য প্রয়োজনীয় হিসাবনিকাশ সম্পন্ন করা।
২. নকশা বা মানচিত্র অঙ্কন (Plotting):
হিসাবনিকাশের তথ্য অনুযায়ী পেন্সিল ব্যবহার করে নকশা বা মানচিত্র অঙ্কন করা।
৩. কালি বা চূড়ান্ত অঙ্কন (Inking & Finalizing):
অঙ্কিত নকশা বা মানচিত্রে কালিমালা বা চূড়ান্ত রেখা অঙ্কন করে নকশার কাজ সম্পন্ন করা।
৪. ডিজাইন ও প্রাক্কলন (Design & Estimation):
ক্ষেত্রফল, আয়তন ও নকশার আনুষঙ্গিক হিসাবনিকাশের ভিত্তিতে ডিজাইন, প্রাক্কলন এবং অন্যান্য জরিপ সম্পর্কিত কার্যসম্পাদন।
জরিপের গুরুত্ব
জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ভূগোলবিদ ও প্রকৌশলীদের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সরকারি পর্যায়ে ‘জরিপ বিভাগ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থাকে, যা নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করে—
১. দেশের সীমারেখা নির্ধারণ।
২. প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমারেখা সংক্রান্ত যে কোনো বিরোধ সমাধান।
৩. ভূমি জরিপের মাধ্যমে মৌজা, ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র তৈরি।
৪. নতুন তথ্য সংযোজন ও পুরাতন মানচিত্র হালনাগাদ।
জরিপ কার্য পরিচালনার শ্রেণীবিন্যাস নির্ভর করে—
১. জরিপের সূক্ষতা ও ধরন
২. উদ্দেশ্য ও ব্যবহার
৩. প্রয়োগকৃত পদ্ধতি
৪. ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
এভাবে, দাপ্তরিক কাজ জরিপ প্রক্রিয়ার অপরিহার্য অংশ, যা সরজমিনে প্রাপ্ত তথ্যকে কার্যকর, সুশৃঙ্খল ও ব্যবহারযোগ্য আকারে রূপান্তরিত করে।
