অফসেট কী, লম্বিক অফসেট বা আয়তাকার অফসেট ও তীর্যক অফসেট এর বিস্তারিত

সার্ভেয়িং বিজ্ঞানে অফসেট (Offset) হলো শিকল জরিপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা নকশা প্রণয়ন এবং মানচিত্র অঙ্কনের সময় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। শিকল জরিপে মূল চেইন বা জরিপ রেখা থেকে পার্শ্ববর্তী বস্তুগুলোর দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য অফসেট নেওয়া হয়।

অফসেট কী, লম্বিক অফসেট বা আয়তাকার অফসেট ও তীর্যক অফসেট এর বিস্তারিত

 

অফসেট, লম্বিক অফসেট বা আয়তাকার অফসেট ও তীর্যক অফসেট | অফসেট | সার্ভেয়িং ১

 

অর্থাৎ, শিকল রেখা হতে কোনো বস্তুর লম্ব বা তির্যক দূরত্বকেই অফসেট বলা হয়

  • যদি বস্তুটি শিকল রেখার বামে থাকে, সেটি হবে বাম অফসেট (Left Offset)
  • যদি ডানে থাকে, সেটি হবে ডান অফসেট (Right Offset)

এছাড়া দূরত্ব অনুযায়ী অফসেটের দুই ধরণ হয়:

  • শর্ট অফসেট (Short Offset): তুলনামূলকভাবে ছোট দূরত্ব, যা সাধারণত ১৫ মিটার বা তার কম।
  • লং অফসেট (Long Offset): এর বেশি দৈর্ঘ্যের অফসেট।

 

অফসেট নেওয়ার উদ্দেশ্য

অফসেট নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো জরিপ এলাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও সীমানা সঠিকভাবে নকশায় অঙ্কন করা। সঠিক অফসেট না থাকলে নকশায় বস্তুগুলোর অবস্থান বিকৃত হয়ে যাবে এবং ব্যবহারযোগ্যতা নষ্ট হবে।

অফসেট নেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়:

  1. জরিপের উদ্দেশ্য – যেমন জমির প্ল্যান, সড়ক জরিপ, বাগান বা বিল্ডিং লে-আউট।
  2. নকশার স্কেল – ছোট স্কেলে অতি বেশি তথ্য দিলে নকশা বিশৃঙ্খল হয়ে যায়।
  3. প্রয়োজনীয় তথ্যের গুরুত্ব – অপ্রয়োজনীয় ডিটেইল বাদ দিয়ে কেবল প্রাসঙ্গিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

অফসেট নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

অফসেট পরিমাপের জন্য সাধারণত নিম্নোক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়:

  • ফিতা (Measuring Tape) বা অফসেট রড – দূরত্ব পরিমাপের জন্য।
  • অপটিক্যাল স্কয়ার (Optical Square), প্রিজম স্কয়ার বা বক্স সেক্সট্যান্ট – শিকল রেখার সাথে সঠিক লম্ব বা নির্দিষ্ট কোণ নির্ধারণের জন্য।

 

অফসেটের ধরন

অফসেটকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

  1. লম্বিক বা আয়তাকার অফসেট (Perpendicular or Rectangular Offset)
  2. তীর্যক অফসেট (Oblique Offset)

 

. লম্বিক বা আয়তাকার অফসেট

লম্বিক অফসেটে শিকল রেখা থেকে বস্তুর দিকে ৯০° কোণে দূরত্ব মাপা হয়। এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজ পদ্ধতি।

পরিমাপের ধাপ:

  1. শিকল রেখায় চেইনেজ পয়েন্ট নির্ধারণ।
  2. অপটিক্যাল স্কয়ার বা প্রিজম স্কয়ার ব্যবহার করে সমকোণ বের করা।
  3. ফিতা বা অফসেট রড দিয়ে বস্তুর পর্যন্ত দূরত্ব মাপা।
  4. চেইনেজ ও অফসেট উভয় তথ্য জরিপলিপিতে লিখে রাখা।

ব্যবহার ক্ষেত্র:

  • সোজা দালান, দেয়াল, সীমানা, সড়কপথ ইত্যাদি।
  • সুনির্দিষ্ট সমকোণে অবস্থান নির্ধারণের জন্য।

 

 

অফসেট, লম্বিক অফসেট বা আয়তাকার অফসেট ও তীর্যক অফসে

 

. তীর্যক অফসেট

তীর্যক অফসেটে শিকল রেখা থেকে বস্তু পর্যন্ত দূরত্ব সমকোণে না নিয়ে তির্যকভাবে নেওয়া হয়। এতে শিকল রেখার দুটি ভিন্ন চেইনেজ বিন্দু থেকে বস্তু পর্যন্ত দুটি দূরত্ব নেওয়া হয়।

কেন প্রয়োজন:

  • প্রতিবন্ধক থাকলে (পানি, বাঁধা, কাঁটাতারের বেড়া ইত্যাদি)।
  • অনিয়মিত বা বাঁকানো সীমানা।
  • কোণ মাপার যন্ত্র না থাকলেও বস্তুর অবস্থান নির্ধারণ।

পরিমাপের ধাপ:

  1. শিকল রেখায় দুটি উপযুক্ত চেইনেজ পয়েন্ট নির্বাচন।
  2. ঐ দুটি বিন্দু থেকে বস্তু পর্যন্ত দূরত্ব মাপা।
  3. জরিপলিপিতে উভয় দূরত্ব ও চেইনেজ লিখে রাখা।
  4. নকশা অঙ্কনের সময় ত্রিভুজের সূত্র ব্যবহার করে বস্তুটির অবস্থান নির্ধারণ।

ব্যবহার ক্ষেত্র:

  • নদী, খাল বা মহাসড়কের অপর পারে বস্তু।
  • বাঁকা বা অনিয়মিত সীমানা।
  • প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রতিবন্ধক যুক্ত এলাকা।

 

অফসেট, লম্বিক অফসেট বা আয়তাকার অফসেট ও তীর্যক অফসে

 

অফসেট নেওয়ার সাধারণ নিয়মাবলি

  1. সোজা কাঠামো: দুই প্রান্তে অফসেট নিতে হবে, বাঁক থাকলে প্রতিটি বাঁকে।
  2. গোলাকার কাঠামো: ব্যাস বা ব্যাসার্ধ জেনে কেন্দ্র পর্যন্ত অফসেট।
  3. নিয়মিত সীমানা বা রাস্তা: শুরু, মাঝখান ও শেষ বিন্দুতে অফসেট।
  4. শিকল রেখা কাঠামো ছেদ করলে: উভয় পাশে অফসেট এবং ছেদ বিন্দুর চেইনেজ লিখে রাখা।
  5. পিলার, গেট, দেয়াল ইত্যাদি: প্রয়োজনীয় সংখ্যক অফসেট।
  6. গ্রন্থি রেখা টেনে: বড় কাঠামো অঙ্কনের জন্য অফসেট নেওয়া যেতে পারে।
  7. ভূমির দাগ বা প্লটের কোনা: সব কোনায় অফসেট।
  8. অনিয়মিত সীমানা বা বাগান: সঠিক আকার তুলতে পর্যাপ্ত অফসেট।

 

 

সার্ভেয়িং ১ সূচিপত্র
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

অফসেট, বিশেষ করে লম্বিক বা আয়তাকার অফসেট এবং তীর্যক অফসেট, শিকল জরিপের একটি অপরিহার্য অংশ। সঠিকভাবে অফসেট পরিমাপ ও লিপিবদ্ধকরণ জরিপকৃত এলাকার বাস্তব চিত্র নকশায় প্রতিফলিত করতে সহায়তা করে। জরিপকারীর সূক্ষ্ম মনোযোগ, সঠিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ না করলে নকশায় ভুল দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তীতে প্রকল্পের গুণমান ও গ্রহণযোগ্যতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জরিপের সময় প্রতিটি ধাপে প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে, যথাযথ পরিকল্পনা করে এবং সঠিক কৌশল ব্যবহার করে অফসেট নিতে হবে। যথাযথ অফসেটের মাধ্যমে নকশা শুধু নির্ভুল হয় না, বরং এটি একটি প্রামাণ্য নথি হিসেবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকে, যা ভূমি জরিপ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য প্রকৌশল কাজে অপরিহার্য।

Leave a Comment