প্রিজমেটিক কম্পাস, সার্ভেয়ার্স কম্পাস ও ট্রাফ কম্পাসের বর্ণনা

প্রিজমেটিক কম্পাস, সার্ভেয়ার্স কম্পাস ও ট্রাফ কম্পাসের বর্ণনা – নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “সার্ভেয়িং ১” এর “কম্পাস জরিপ প্রক্রিয়ার ব্যবহারিক” পাঠ এর অংশ|

প্রিজমেটিক কম্পাস

জরিপকারীরা জিওডেসি, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, রিগ্রেশন বিশ্লেষণ, পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, মেট্রোলজি, প্রোগ্রামিং ভাষা এবং আইনের উপাদানগুলির সাথে কাজ করে।

প্রিজমেটিক কম্পাস ( Prismatic Compass ) :

কম্পাস বাক্স P_তাত্ত্বিক একটা তিন পাশ-বিশিষ্ট কাচ বা প্রিজমের ভিতর দিয়ে এ কম্পাসের পাঠ নেয়া হয় বিধায় একে প্রিজমেটিক কম্পাস বলা হয়। যন্ত্রটি হাতে নিয়ে বা তেপায়ার উপর রেখেও কাজ করা যায় । নিম্নে (চিত্রঃ ১৬.১) একটা প্রিজমেটিক কম্পাসের চিত্র দেয়া হয়েছে। কম্পাস বাক্সের (1) ব্যাস 85মিমি হতে 110 মিলিমিটার। এটার কেন্দ্রে ইস্পাতের আলের (Pivot-2) উপর ভারসাম্য অবস্থায় চুম্বক শলাকা (3) অ্যালুমিনিয়ামের ভাগচক্র (Graduated ring – 5 ) সহ স্থাপিত। ভাগচক্রে ডিগ্রি ও অর্ধ-ডিগ্রির দাগকাটা থাকে। ভাগচক্রে চুম্বক শলাকা দক্ষিণ মেরুতে òং, উত্তর মেরুতে 180°, পূর্ব বরাবর 270° এবং পশ্চিমে 90° এর দাগ থাকে।

 

প্রিজমেটিক কম্পাস, সার্ভেয়ার্স কম্পাস ও ট্রাফ কম্পাসের বর্ণনা

 

ভাগচক্রের লেখাগুলো উল্টাভাবে থাকে। আলের মাথায় আকীকের উপর আকীক টুপি (Agate cap-4) দেয়া থাকে। এতে চুম্বক শলাকার ঘূর্ণনে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। বাক্সের পাশে এক দিকে প্রতিসারক প্রিজমসহ লম্বা চেরাবিশিষ্ট দৃষ্টিপাত (Sight vane–9) এবং ব্যাসার্ধীয়ভাবে বিপরীত দিকে অশ্বকেশর (Horsehair-14) সহ বস্তুপাত (Object vane-13) লাগানো থাকে। ধুলাবালির হাত হতে রক্ষার জন্য প্রিজমে ঢাকনা (Prism cap-8) থাকে। যখন স্থানান্তর করা হয় বা যখন যন্ত্র ব্যবহার করা না হয় তখন প্রিজমসহ দৃষ্টিপাত এবং বস্তুপাত কম্পাসের আয়নার ঢাকনার (glass cover-6) উপর ভাঁজ করে রাখা যায়।

এ অবস্থায় একটা উত্তোলক পিনের (Lifting pin-18) উপর চাপ পড়ে বিধায় চুম্বক শলাকা আল থেকে উঁচু হয়ে কাচের ঢাকনার সাথে লেগে যায়, ফলে এটা নড়াচড়া করতে পারে না । পাঠ নেয়ার কালে চুম্বক শলাকা কাঁপতে থাকলে ব্রেক পিন (16) এর উপর মৃদূ চাপ দিলে স্প্রিং ব্রেক (17) উত্তোলক লিভার (Lifting lever-19) কে উত্তোলিত করে ভাগচক্রের কম্পন বন্ধ করে দেয়। প্রতিসারক প্রিজম দর্শকের চোখের দৃষ্টির ভিত্তিতে উঁচু-নিচু করে সমন্বয় করা যায় অনেক সময় বস্তুপাতের সাথে সমন্বয়কারী আয়না (Adjustable mirror—15) লাগিয়ে উপরের বা নিচের বস্তু দেখার সুযোগ করে নেয়া যায়। এতদভিন্ন কড়া রোদের সময় অত্যুজ্জ্বল বস্তুর উপর পাঠ নেয়ার কালে চোখ নিরাপদ রাখার জন্য রঙিন কাচ (Cloured glass – 10) ব্যবহৃত হয়।

 

প্রিজমেটিক কম্পাস, সার্ভেয়ার্স কম্পাস ও ট্রাফ কম্পাসের বর্ণনা

 

এ কম্পাসটির চুম্বক শলাকা যখন সরাসরি উত্তরমুখী হবে, তখন 0° ‘পাঠ পাওয়া উচিত। যেহেতু বস্তুপাত প্রিজমের সরাসরি উল্টো দিকে থাকে, সেহেতু দক্ষিণ দিক প্রিজমের নিচে থাকে। কাজেই ভাগচক্রের ০° পাঠটি চুম্বক শলাকার দক্ষিণ প্রান্তেই থাকা উচিত। ফলত ডানাবর্তে বিয়ারিং নিতে সুবিধা হয়। এ ছাড়াও যেহেতু প্রিজমের ভিতর দিয়ে পাঠ পড়া হয় তাই ভাগচক্রে পাঠগুলো উল্টা লেখা থাকায় পাঠ স্বাভাবিকভাবে পড়া যায় ।

 

সার্ভেয়ার্স কম্পাস (Surveyor’s Compass) :

এটা পুরান ধরনের কম্পাস। ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার হতো। এটা বাংলা কম্পাস নামেও পরিচিত। একটি সার্ভেয়ার্স কম্পাস দেখানো হলো। প্রধানত চুম্বক শলাকা, কম্পাস বাক্স ও দুটি খাড়া পাত নিয়েই এটা নির্মিত। এটার ভাগচক্র সরাসরি কম্পাস বাক্সের সাথে সংযুক্ত এবং এটা প্রিজমেটিক কম্পাসের মতো চুম্বক শলাকার সাথে সাথে ঘোরে না। এটার বস্তুপাত প্রিজমেটিক কম্পাসের মতো কিন্তু দৃষ্টিপাতে P শুধুমাত্র একটা খাড়া ফাটল থাকে। দাগকাটা ভাগচক্রটি বাক্সের ভিতরের দিকে ফ্রেম ও দৃষ্টিপাতের সাথে দৃঢ়ভাবে আটকানো থাকে। এর ফলে দৃষ্টিপাত সরানোর সাথে সাথে ভাগচক্রও ঘোরে।

চুম্বক শলাকার সাথে এর কোনো সংযোগ নেই বলে চুম্বক শলাকা স্থির থাকে। ভাগচক্রে পূর্বদিকে পশ্চিম এবং পশ্চিম দিকে পূর্ব লেখা থাকে। এতে চুম্বক শলাকার উত্তর প্রান্তে ব পাঠই বিয়ারিং। এতে প্রথমে বস্তুপাত ও দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে বস্তুকে ছেদ করে নেয়া হয় । এরপর চুম্বক শলাকার উত্তর প্রান্তের উপর পাঠ নেয়া হয়। এ উত্তর প্রান্তের পাঠই বিয়ারিং। এটার সাহায্যে সরাসরি হ্রাসকৃত বিয়ারিং নেয়া হয় বিধায় ভাগচক্রের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় প্রান্তে 0° এবং পূর্ব ও পশ্চিমে 90° লেখা থাকে। ধারক ব্যতীত এটা ব্যবহার করা যায় না। জ্যাকব স্ট্যান্ড নামে পরিচিত একক রডের উপর এটা স্থাপন করা যায়। তেপায়াতেও এটা স্থাপন করা যায় । 

সম্মুখ বিয়ারিং ও পশ্চাৎ বিয়ারিং | বিয়ারিং রূপান্তরকরণ | সার্ভেয়িং ১
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ট্রাফ কম্পাস (Trough Compass) :

এটা দেখতে অনেকটা সরু আয়তকার বাক্সের মতো মনে হয়। এটার আকার 150 মিমি x 30 মিমি x 20 মিমি প্রায়। এটার ঠিক মধ্যভাগে আলের উপর প্রায় 125 মিমি লম্বা চুম্বক শলাকা সাম্যাবস্থায় বসানো থাকে। চুম্বক শলাকার উভয় প্রান্তে দু’খানা ছোট স্কেল (ডিগ্রির) থাকে । স্কেল দুটির মধ্যভাগে 0° এবং উভয় পাশে 5° দাগাঙ্গিত থাকে। উভয় প্রান্তই স্কেলের 0° তে থাকলে চুম্বকীয় উত্তর রেখা নির্দেশ করে (চিত্রঃ ১৬.৩)। এটা আয়তাকার কম্পাস (Rectangular Compass) নামেও পরিচিত।

তা ছাড়া সমুদ্রে জাহাজের নাবিকগণ জাহাজ চালনার ক্ষেত্রে দিক নির্ণয়ে ও জাহাজের গতিপথ নির্দেশনার জন্য নৌকম্পাস, | সাধারণ ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা ও বনে বা মরুভূমিতে পথ নির্দেশনায় দিগদর্শর্ন কম্পাস, খনিজ আহরণে দিগ-নির্দেশনায় মাইনিং | কম্পাস, যন্ত্রপাতিতে উত্তর দিক নির্দেশনার জন্য যন্ত্রে সুবিধাজনক সংস্থাপনে টিউবুলার কম্পাস ব্যবহৃত হয়।

Leave a Comment